যখন চোখ খুললাম.. দেখি, মনিটরের ওপারে একজন বসে আছে। বসে বসেই ঘুমাচ্ছে!!
রাতে কথা বলতে বলতে কখন ঘুমিয়ে গেছি টের পাই নি। পাগলীটা আমাকে ডেকেছে কিনা তা–ও জানি না। আজ আমার জন্মদিন, আমাকে ফার্ষ্ট উইশ করার জন্য পাগলীটা এভাবেই অপেক্ষা করছে! মেয়েটা আমাকে এত ভালোবাসে কেন!! আসলেই পাগলী একটা। এই video call টা শত দূরত্বের মাঝেও আমাদের কাছে রেখেছে।
পাগলীটার এত সুখের ঘুমটা নষ্ট করতে ইচ্ছা হচ্ছে না মোটেও কিন্তু এভাবে ঘুমিয়ে থাকলে তো ওর গা–হাত ব্যথা করবে। কি যে করি!! ডাকব, না কল দিয়ে ওর ঘুম ভাঙ্গাব? এসব ভাবতে ভাবতে আনমনে লাইনটা কেটে কল দিয়ে ফেলেছি, রিং হওয়ার শব্দে টের পেলাম। তাড়াতাড়ি কলটা কাটলাম।
গুছিয়ে বসে, নিজের প্রতি একগাদা বিরক্তি নিয়ে কল ব্যাক করলাম। আজ পাগলীটার আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘুম থেকে উঠা দেখা হলো না তার বিরক্তি। দুইবার রিং বাজতেই ও চোখ ঢলতে ঢলতে কল রিসিভ করল।
– বাবু, I am extremely sorry.
> উম্ম..! It’s okay. আচ্ছা, কয়টা বাজে?
– ৫টা ৪০।
> (লাফিয়ে উঠল) উপস!! আচ্ছা বাবু, bye. পরে কথা হবে। লাইনটা কাটতে গিয়ে কি যেন মনে করে থামল। > Anyway Happy Birth Morning. (আহ্লাদি স্বরে) Happy Birthday, babu-sona.
– (এত্তগুলো ভালোবাসা ভরা চাহনি নিয়ে) Good Morning, baby.
> Bye..
দশবছর একসাথে আছি। প্রথমে প্রেম তারপর সংসার কিন্তু কখনও পাগলীটাকে ছাড়া এই দিনটা কাটাই নি। ফাঁকা বাসা.. কেউ একগাল প্রাণ জুড়ানো হাসি নিয়ে আমাকে ওয়েলকাম করবে না তাই বাসায় ফিরতে মন চাচ্ছে না। এজন্য হিমুর মত নিরুদ্দেশ হাঁটছি।
রাত ৮টার দিকে ফোন বাজল। – হ্যালো বাবু, স্যরি!! আমার তো আজ বিজি ডে ছিল তাই সারাদিন তোমার খোঁজ নিতে পারিনি। কি করছ? কেমন কাটলো দিন? কোথায় এখন?
> বাবু, তুমি নাই কেন!!
– কৈ!! আছি তো।
> কাছে নাই কেন!?
– কাছেই তো আছি। বলো, পাশে নাই কেন!?
> একই তো কথা।
– আচ্ছা শোন.. তাড়াতাড়ি বাসায় যাও। স্কাইপ অন করো। I have something for you which is your most favourite.
> আমার most favourite তো তুমি। কিন্তু তুমি তো আসবে না.. আর most favourite gift দিয়ে কি হবে!!
– উফ্.. বাবু!! তুমি তো বোঝো। আমার কত কষ্ট হচ্ছে বলো? পারলে কি আর আজকের দিনে দূরে থাকতাম! বাসায় আসো।
বাসার দরজা খুলতে গিয়ে আমার কান্না পাচ্ছে। হ্যাঁ, ছেলেদেরও কান্না পায়। ভেতরে ঢুকে দেখি, অন্ধকার বাসা এবং ম্যাচের কাঠির আলোয় একটা দেবীর অবয়ব দেখা যাচ্ছে। তৎক্ষণাত লাইট জ্বালালাম। একগাল প্রাণ জুড়ানো হাসি হেসে পাগলী.. স্যরি, দেবীটা আমাকে জড়িয়ে ধরতে ধরতে বলল, Happy Birthday, baby. জড়িয়ে ধরে কানে ফিসফিস করল, “পেলেন তো.. আপনার most favourite gift? এইবার কেকটা কাটেন। মোম গলে যাচ্ছে।“